কবি পরিচিতি
চার্লস বুকোওস্কি (১৬ আগস্ট, ১৯২০- ৯ মার্চ, ১৯৯৪) একজন
জার্মান-আমেরিকান সাহিত্যিক, যাঁকে ডার্টি
রিয়্যালিজম এবং ট্র্যান্স ফিকশন আন্দোলনের
অন্যতম পুরোধা বলে চলে। গল্প, কবিতা, উপন্যাসে
বিচরণকারী এই ব্যক্তিত্ব তীব্র যৌনতা ও ভায়োলেন্সের কথাচিত্রের মাধ্যমে সমাজ ও
ইতিহাসের বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
অনুবাদকের কথা ও চারটে অনুবাদ কবিতা
কেন বুকোওস্কি,
কেন যৌনতা এই ভাবনাটা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে গেল আমাদের এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে
মেসেঞ্জার কিংবা ওয়াটসাপে পড়ে থাকা কিছু অদেখা সেক্সটিং কিংবা সেক্স চ্যাট যেগুলো
টুকরো টুকরো কবিতা হয়ে ওঠে, আর জীবনের পুরো ছবিটাই চোখের সামনে মেলে দ্যায়, বুকোওস্কিও তেমনি একইভাবে আমার
প্রিয় কবি থেকে অবসেশন হয়ে ওঠেন আর তাই এই চারটে কবিতা বুকোওস্কি ও আমার তরফ থেকে। (শৌনক সরকার)
এবং
যৌনতা
আমি যখন উইলটন
অ্যাভিনিউ দিয়ে যাচ্ছিলাম,
বছর পনেরোর সেই মেয়েটা আমার গাড়ির সামনে
এসে দাঁড়ালো,
পরণে যার আঁটোসাঁটো জামাপ্যান্ট,
যেন তার শরীরকে চেপে ধরে আছে।
আমি গাড়ি দাঁড়
করিয়ে তাকে পেরোতে দিলাম, দেখে নিলাম আলগোছে তার মেদহীন দেহপট,
যেন ঝড়ের ঢেউসমূহ
সেই শরীর ।
সে তাকালো আমার
দিকে, তার বেগুনি চোখের
উষ্ণতায় আমাকে মেপে নিল ,
আদৌও চোখে কি
কোনো ভাষা ছিল জানা নেই, বরং বিঠোফেন শুনতে শুনতে
চোখ আটকাচ্ছিল
তার মুখে,
যেখানে ছিল আস্ত বাবল্ গাম,
সে ঢুকে গেল
মুদির দোকানে, আমি পড়ে রইলাম বিঠোফেনেই।
মনে রাখার মতো একটা হাসি
আমাদের কাছে ছিল
সেই একগুচ্ছ সোনালী মাছ,
যারা ঘুরে বেড়াত সেই ছোট্ট একটা পাত্রে,
আমার মা চুপ করে
দেখতো সেই দৃশ্য, দেখত তাদের আনন্দ আর বলত,
"হেনরি ভালো থাকিস, খুশি থাকিস"
মা হয়ত ঠিক বলত, হয়ত কোনো একটা সময় আমাদের
ভালো
থাকার, আমাদের সুখে থাকার অধিকার ছিল।
বাবা এসে
সপ্তাহে বহুবার আমাকে আর মাকে পেটাত,
আমরা জানতে
চাইনি কেন বাবা কেন পেটায় আমাদের,
লোকটা নিজেই বুঝত না ওর ৬ ফুট ২ ইঞ্চি শরীরটার মধ্যে
কীসের এত রাগ, কী তাকে ভিতর থেকে কামড়ায় যে সে হয়ে যায়
এতটা মারমুখী, এতটা হিংস্র।
আমার মা, সুখ
চেয়েছিল,বাঁচতে
চেয়েছিল সেইভাবে, যেইভাবে বাঁচতে চায়
ছোট্ট একটা মাছ, কিন্তু
জুটেছিল শুধুই মার সপ্তাহে দু-তিনবার,
তাও ক্ষীণ হয়ে
আসা গলায় বলত-
"হেনরি তুই হাসিস না কেন? একটু হাসতেও তো পারিস।"
মা তারপর হাসত, দেখাত কীভাবে চরম দুঃখে
হাসা যায়। আমার দেখা
বিষন্নতম হাসি ছিল সেটা।
একদিন সোনালী
মাছগুলো মরে গেল, সেই ছোট্ট পাত্রে ওদের মৃতদেহগুলো বেওয়ারিশ লাশের মতো ভেসে থাকতে দেখা গেল,
চোখগুলো ছিল খোলা ।
বাবা ঘরে এলো, লাশগুলোকে ছুঁড়ে দিল রান্নাঘরের মেঝেতে বসে থাকা বিড়ালটার দিকে,
আমরা দেখছিলাম আর আমাদের মা তখন হাসল।
সুপারমার্কেটের বাইরে সেই মেয়েটা
সেই লম্বাটে
মেয়েটা তাকিয়েছিল আমার দিকে,
যেন আমি এক
চলমান জঞ্জাল,
যাকে পরখ করে নিচ্ছিল সেই মেয়েটা।
সেই মেয়েটা
তাকাচ্ছিল আমার দিকে, কিছু কি ছিল তার দৃষ্টিতে নাকি আমিও বিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলাম তার পরণের
প্যান্টিহোসের ওপরে কী থাকে তা জানতে?
আমি মধ্য
পঞ্চাশের এক ব্যক্তি, যার যৌনতার প্রতি কোনো অজানা আকাঙ্ক্ষা নেই তবুও সেই লম্বা মেয়েটাকে আমি
নিচ্ছি এবং আমি আজ অবলীলায় ছেড়ে দিতে পারি চিরযৌবনাদের তাদের সমবয়সী
যুবকদের জন্য ।
আমি জানি
বাজারের বাইরের এই পৃথিবী দানবীয় কিছু ব্যক্তির দ্বারা চলে,
তাই ভীষণ একলা
এই পৃথিবী, ঠিক আগেও যেমনটা ছিল।
অমরত্ব
যেখানে আতঙ্কগ্ৰস্ত
আমি যখন বিয়ারের
বোতল নিয়ে বিছানায় শুলাম,
যোনিটাকে সামনে রেখে খুলতে থাকল ওর বাকি
জামাকাপড়।
তোমার পাছার ওই
জড়ুলটা যেন কিরকম, কীভাবে পেলে এটাকে?
তোমার কাছে ওটা
জড়ুল কিন্তু আদতে ওটা তিল।
আমার ভীষণ ভয়
লাগছে ওটাকে,
ওটাকে কি সরিয়ে ফেলা যায় না?
বিছানা ছেড়ে উঠে
গেলাম আমি অন্য ঘরে, দোলনায় বসে দুলতে লাগলাম আমি অনেকক্ষণ ধরে ।
সে বেরিয়ে এল ঘর
ছেড়ে, আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে
উঠলো,
“তুমি বাঁড়া বুড্ঢা
ভুসি মাল,
তোমার শরীর জুড়ে
হাজারটা জড়ুল ও ক্ষতে পরিপূর্ণ,
তোমার মতো নোংরা
লোক আমি দেখিনি আরেকটাও।”
ভুলে যাও আমি কী
বললাম, বরং তোমার পাছায় ওই তিলটা
নিয়ে কিছু বলো, যা তুমি জানাতে চাও।
সে ফিরে গেল সেই
ঘরে, জামাকাপড় পরে এক
নিশ্বাসে
বেরিয়ে গেল মুখের
ওপর দরজাটা বন্ধ করে ।
আমি শুধু ভেবে
চললাম যে আমার কবিতার তো সব বই পড়ে ফেলেছে সে,
চিন্তিত হয়ে রয়ে
গেলাম বরং এই ভেবে যে বাইরের দুনিয়াটাকে সে বলেই না বসে যে আমি কতটা কুৎসিত, কতটা নোংরা একটা লোক ।
খুব ভালো কাজ হয়েছে ।
ReplyDeleteভালো হয়েছে।
ReplyDelete